কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ফরিদগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ লাল সরকার (৭০) প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জ্বরাক্রান্ত থেকে ৭ জুলাই বুধবার রাত দেড়টায় কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। এছাড়া তিনি একজন ডায়াবেটিকস রোগী হওয়ায় জ্বরের সময় রুচিহীনতা ও অনিদ্রাতার কারনে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়। তিনি প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় এক সপ্তাহ পারিবারিক ডাক্তার পল্লী চিকিৎসক নারায়ন চন্দ্রের তত্তাাবধায়নে ছিলেন। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ৭ জুলাই দুপুরে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে তার তীব্র জ্বর ও শ্বাসকষ্টর দেখা দিলে সাথে সাথে অক্সিজেন দেয়া হয়। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকগণ তার সুস্থতার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও অতি দুর্বলতায় তার শরীর অক্সিজেন গ্রহণ করতে না পাড়ায় রাত আনুমানিক দেড়টায় তার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
গৌরাঙ্গ লাল সরকার ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী হিসেবে সকলের কাছে প্রিয় ছিলেন। তার দীর্ঘ শিক্ষকতা পেশার প্রায় পুরোটা সময় পাখীমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কাটিয়েছেন। চাকুরিজীবনের শেষ এক বছর তিনি ফরিদগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখীমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং পাখীমারার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পাখিমারা মন্দিরের সহ সভাপতি হিসেবে অত্র এলাকার ধর্ম প্রচারে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলার হিন্দু ধম্বালম্বী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান মন্দির মদন মোহন সেবাশ্রমের তিনি একজন উপদেষ্টা।
আট বছর পূর্বে তার স্ত্রী সরকারি রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা অঞ্জলী কনা দাস ক্যান্সার আক্তান্ত হয়ে মারা যান। তাদের দুই ছেলে। বড় ছেলে চিন্ময় সরকার রসায়ন বিজ্ঞানে মাষ্টার্স পাশ করে নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং ছোট ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ঢাকাতে একটি টেক্সটাইল কোম্পানীতে কর্মরত।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার হাসপাতালে যেয়ে তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ মহিব্বুর রহমান, তাঁর তিনজন সহপাঠী ও ঘনিষ্ট বন্ধু যথাক্রমে সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বর্তমান কলাপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব তালুকদার।
করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাখিমারাস্থ তার নিজ বাড়িতে পরিবারের সদস্য ও সীমিত সংখ্যক আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা ৩০মিনিট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তাঁর নিজ সম্প্রদায়ের নিয়মানুযায়ী পারিবারিক শ্মশানে তার মা-বাবা, স্ত্রী ও পূর্বপুরুষদের পার্শ্ববর্তী স্থানে তার দেহের দাহ সু-সম্পন্ন হয়।