দর্পণ ডেস্ক : আগামী মাসে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। শুক্রবার ট্রুডোর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার গভীর ও স্থায়ী বন্ধুত্ব নবায়নে আগামী মাসে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন এই দুই নেতা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের দিনই জো বাইডেনের একটি সিদ্ধান্তে প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। এর পরেই টেলিফোনে কথা হয়েছে দুই নেতার। আলাপকালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে আগামী মাসে স্বশরীরে দেখা করতে রাজি হয়েছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খবর আলজাজিরার।

পৃথক এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, দুই নেতা মার্কিন-কানাডীয় সম্পর্কের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে এবং করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ বেশ কিছু এজেন্ডা নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

ফোনালাপে বাইডেন-ট্রুডো আগামী মাসে আবারও কথা বলতে রাজি হয়েছেন বললেও যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে স্বশরীরে বৈঠকের কথা উল্লেখ নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডোর সম্পর্ক ছিল অনেকটাই অম্ল-মধুর। সরাসরি মার্কিন প্রশাসনের বিরোধিতা না করলেও ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্পের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। গত বুধবার বাইডেন শাসনভার গ্রহণের পর বিদেশি নেতাদের সঙ্গে কথা বলা প্রথম ব্যক্তি হচ্ছেন ট্রুডো। হোয়াইট হাউসে বাইডেনের আগমনকে তিনি ‘নতুন যুগের সূচনা’ মন্তব্য করে শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন।

তবে ওভাল অফিসে বসেই জো বাইডেন যেসব সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে বহুল আলোচিত-সমালোচিত কিস্টোন এক্সএল পাইপলাইনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করা। আর এতেই মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত হতাশাজনক বলে প্রকাশ্যে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি।

এক বিবৃতিতে ট্রুডো বলেছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমরা প্রেসিডেন্টের প্রতিশ্রুতিকে যেমন স্বাগত জানাই, তেমনি এ সিদ্ধান্তে (কিস্টোন) আমরা হতাশ। যদিও নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলো পূরণের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রয়েছে।

টেলিফোনে আলাপের সময়ও কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী বাইডেনের কাছে পাইপলাইন ইস্যুটি তুলেছেন বলে জানিয়েছে ট্রুডোর কার্যালয়।

কানাডার আলবার্টা প্রদেশ থেকে মনটানা আর সাউথ ডাকোটার মধ্যে দিয়ে টেক্সাস পর্যন্ত তেলের পাইপলাইন নির্মাণের প্রকল্পই কিস্টোন এক্সএল নামে পরিচিত। ১ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পাইপলাইনের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের দিকে।

তবে পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৫ সালে ওই প্রকল্পে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।

কানাডা সব সময় এ প্রকল্পে সমর্থন দিলেও পরিবেশবাদী সংস্থা এবং আদিবাসী আমেরিকান গোষ্ঠীগুলো বরাবরই এর বিরোধিতা করে আসছে।

পরিবেশবাদীদের দাবি, ‘টার স্যান্ডস’ নামে পরিচিত এই তেল সাধারণ অপরিশোধিত তেলের চেয়ে আরও ঘন, আরও অ্যাসিডযুক্ত এবং বেশি ক্ষতিকর। পরিবহনের সময় পাইপ থেকে চুয়ে পড়া তেল পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে দাবি করেছেন তারা।

বাইডেনের আদেশের পরে পাইপলাইন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টিসি এনার্জি বুধবার থেকেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে অন্তত হাজারখানেক মানুষ চাকরি হারাবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।