দর্পণ ডেস্ক : খুব শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে করোনা শনাক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, তাদের প্রস্তুতি শেষের পথে। বিদেশ থেকে কিট এসে পৌঁছালেই শুরু হবে করোনা শনাক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টিজেন টেস্ট  করোনা সংক্রমণ রোধে ব্যাপকহারে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়া অ্যান্টিজেন টেস্টে সময়লাগে মাত্র ১৫ মিনিট এবং খরচও অনেক কম।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর করোনার র‌্যাপিড টেস্টের জন্য সরকার অনুমতি দেয়। অনুমতির ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘অতি স্বল্প সময়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য সারাদেশে অ্যান্টিজেন টেস্টের চাহিদা রয়েছে। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের প্রস্তাবনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১১ সেপ্টেম্বরের ‘ইনটারিম গাইডেন্স’ অনুসরণপূর্বক দেশের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সরকারি পিসিআর ল্যাব এবং সব স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে অ্যান্টিজেনভিত্তিক টেস্ট চালুর অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো।’

‘তবে এক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে যাচাই-বাছাইয়ের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রক্রিয়াধীন কোভিড-১৯ ল্যাব সম্প্রসারণ নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে তা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।’

দেশে বর্তমানে করোনা শনাক্তে আরটিপিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন) পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে। এই আরটিপিসিআরকেই বিশ্বজুড়ে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড অর্থাৎ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি বলে ধরা হয়।

কিন্তু আরটিপিসিআরে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে ফলাফল পেতে, যেখানে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ফলাফল পেতে সময় দরকার হবে মাত্র আধা ঘণ্টারও কম। আর অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে—পয়েন্ট অব কেয়ার।

প্রসঙ্গত, করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য র‌্যাপিড টেস্টের জন্য বারবার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটিও তাদের সভায় পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাপকহারে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত এবং করোনার সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিজেন টেস্ট ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।

কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে, যার পরিমাণ তুলনামূলক কম। বিজ্ঞপ্তিতে আরও  বলা হয়, কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে পারলে সংক্রমণের সংখ্যা আরও বেশি  শনাক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই উদ্দেশ্যে জাতীয় পরামর্শক কমিটি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্টের জন্য একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে।

তারও আগে গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতর অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন সম্পর্কিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলেই ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সে অনুযায়ী অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেন কিট কেনার জন্য স্পেসিফিকেশন দেবে বলে জানায়। গত ২৪ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনার অ্যান্টিজেন টেস্ট অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কবে নাগাদ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরাজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অ্যান্টিজেন পরীক্ষার কিটের ক্রয় প্রক্রিয়াচলছে। কিট হাতে পেলেই পরীক্ষা শুরু হবে।’ তবে কবে নাগাদ কিট দেশে এসে পৌঁছাবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও শিগগিরই সেটা হবে’, বলেন তিনি।

করোনা পরীক্ষার জন্য আরটিপিসিআরের পাশাপাশি দেশে এখন অ্যান্টিজেন পরীক্ষা থাকবে বলে জানান মীরাজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি জানান, তবে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার পরও যদি কেউ নেগেটিভ হয় তাকে আবারও পিসিআর করতে হবে। কারণ, অ্যান্টিজেনে ফলস নেগেটিভ হওয়া চান্স আছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যেই অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হবে।’ তবে সেটা শুধু সরকারি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, ‘যেসব জেলায় আরটিপিসিআর নেই, সেসব জেলায় আগে শুরু করতে চাই। একইসঙ্গে বড় বড় হাসপাতালে যেখানে জরুরি সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে বেশি, যেখানে দ্রুত টেস্টট করা দরকার হয়, অর্থাৎ রোগীদের পজিটিভ-নেগেটিভ দেখে সেবা দিতে হবে, সেখানে এটা চালু করা হবে।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন অনেক জায়গায় (পরীক্ষার রিপোর্ট) অপেক্ষা করতে হয় এক সপ্তাহের মতো। সেই সময়ে রোগীরা আবারও সংক্রমিত হয়ে যান। এ কারণে সেসব জায়গায় এটা আগে চালু করা হবে।’

এরপর অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আবার যদি বেসরকারিভাবে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার  অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তারাও করতে পারবে। তবে সেখানে একটি ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।’

ফি কীভাবে নির্ধারণ করা হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবুল বাসার খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি, আরটিপিসিআর টেস্ট যে ফিতে করা হচ্ছে, সেই একই টাকায় করা হবে। এর চেয়ে বেশি করার সুযোগ নেই।’

প্রাথমিকভাবে টেস্টের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিএমএসডির মাধ্যমে দুই লাখ কিটের জন্য রিক্যুইজিশন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দুই-এক দিনের মধ্যেই চলে আসবে। এছাড়াও ইউএনএফপিএ দেবে ১০ লাখ কিট।’