চরম সংকটে থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (পিএলএফএসএল) কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ থেকে সরে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ না করে পুনর্গঠনের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত বছরের জুলাইতে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ আদালতে আদেন করলে তা গ্রহণ হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএমম আসাদুজ্জামান খানকে প্রতিষ্ঠানটির সাময়িক অবসায়ক নিয়োগ দেন আদালত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন চেয়ে ওই আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। এখন অবসায়ন না করে পুনর্গঠন চাইলে সে ক্ষেত্রে আমানতকারীদেও অর্থ ফেরতের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে।

জানা গেছে, পিপলস লিজিং বন্ধের সিদ্ধান্তের পর থেকে অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাপক চাপে পড়েছে। আরও অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে এরকম গুজবে অনেকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এরকম অবস্থায় চরম সঙ্কটে পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। এ খাতের তারল্য সঙ্কট কাটাতে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন এমডিরা। গত সপ্তাহে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডিরা বৈঠক করে এ দাবি জানান। একই সঙ্গে পিপলস লিজিং বাদে খারাপ অবস্থায় থাকা আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করে এ খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরানোর অনুরোধ করেন তারা।

জানা গেছে, গত সপ্তাহে এমডিদের এ বৈঠকের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ডেকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পিপলস লিজিং বন্ধ না করে পুনর্গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ পরামর্শ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি শিল্প গ্রুপের সঙ্গে আলাপ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেটের কর্ণধার ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন। এর আগেও তিনি এবং তার পরিবারের লোকজন পিপলস লিজিং পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে এ পর্যায়ে এসে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত, দায়-দেনা মেটানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেবর সঙ্গে তারসহ আরও কয়েকটি শিল্প গ্রুপের আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

পিপলস লিজিংয়ের আগে বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়নের উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য এর আগে ব্যাংক একীভূতকরণ, অধিগ্রহণ এবং নাম পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৯ সালে শিল্প ব্যাংক এবং শিল্প ঋণ সংস্থা একীভূত করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গঠন করা হয়। আর ঋণসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়মের তথ্য ফাঁস হওয়ায় ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০৭ সালে ব্যাংকটি পুনর্গঠন করে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক নামকরণ করা হয়। এছাড়া নানা অনিয়মের কারণে আলোচিত ফারমার্স ব্যাংক নাম পরিবর্তন করে পদ্মায় রূপান্তরিত হয়েছে। ব্যাংকটির মালিকানায় এসেছে সরকারি পাঁচটি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে উঠে আসে, পিপলস লিজিং থেকে বিতরণ করা ঋণের অধিকাংশই জালিয়াতির মাধ্যমে সাবেক পরিচালকরা তুলে নেন। ভুয়া কাগজ তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৫ সালে পাঁচ পরিচালককে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে শুধু প্রতিষ্ঠানের নামে জমি কেনার কথা বলে নিজ নামে জমি রেজিস্ট্রি করার মাধ্যমে আত্মসাৎ হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকা। জমি রেজিস্ট্রির এ জালিয়াতির মাধ্যমে সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ১১৬ কোটি টাকা, সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিন মিয়া ১০৭ কোটি টাকা, আরেফিন সামসুল আলামিন, নার্গিস আলামিন ও হুমায়রা আলামিন ২৯৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন মর্মে তখন দুদকে প্রতিবেদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।