কবি বীরেন মুখার্জী

আর এ উক্তি ধরে এগোলে বর্তমান সময়ে যে ক’জন কবিকে ভালো না বেসে উপায় নেই তার মধ্যে ‘বীরেন দা’ কবি বীরেন মুখার্জী অন্যতম। বর্তমান সময়ে চারপাশে অনেক কবি ও কবিতার জন্ম হচ্ছে। এরমধ্যে বীরেন দা’র নামটি কেন এলো? এমন প্রশ্ন হতেই পারে। এখানেও উত্তর সহজ। যিনি এমন প্রশ্ন করবেন তার হাতে বীরেন মুখার্জীর কবিতাগুলো গুঁজে দিলেই সমাধান। কবিতা যে সাধনার বিষয় তা স্পষ্টই বোঝা যাবে তার কবিতা পাঠে। চারপাশের পরিচিত কথাগুলোই সাবলীল বর্ণনায় গাঁথতে জানেন তিনি। প্রতিটি কবিতায় রয়েছে গভীরতা; তবে দুর্বোধ্য নয়। অবাধ্য ছন্দের নামে কোনো জরবদস্তি নেই।

জীবনাভিজ্ঞতা আছে। আছে ক্লেদ। আছে প্রেম, উচ্ছ্বাস, আনন্দ। জীবনের ছন্দ মিলিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন কবিতার মধ্য দিয়ে। তার ভাষায়, ‘মৃত্যুপাতের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি তবু/ দৌড়ে যাচ্ছি ক্রমে।’ কবিতা ভাবনা বলতে গিয়ে বীরেন মুখার্জী বলেছেন- ‘জীবন উপলব্ধির অন্যতম বাহন। আমার যাবতীয় মান-অভিমান, কল্পনা-অনুরাগ, প্রকাশ-অনুভ‚তি সব-ই কবিতাকেন্দ্রিক। কবিতা দিয়ে প্রচল ধারণাকে বাজিয়ে দেখার ইচ্ছে আমার ভেতর শৈশবেই জন্ম নেয়। এ ধারা এখনও বহমান। জীবনকে ধরা কিংবা জীবনের সমগ্রতার অনুসন্ধান চালাই কবিতা দিয়ে। কবিতায় আত্মসুখ নিবিড়…।’

শুধু কি কবিতা? সাহিত্যের প্রায় সব কটি শাখায়ই বিচরণ রয়েছে তার। এ পর্যন্ত বীরেন মুখার্জীর দশটি কবিতার বই, পাঁচটি প্রবন্ধের বই, একটি গবেষণার বই ও একটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদনা করছেন ‘দৃষ্টি’ নামক একটি ছোট কাগজ। কর্মজীবনে সাংবাদিক হওয়ায় লেখেন রাজনৈতিক কলামও। একজন মানুষের এত গুণ দেখে বলা যেতেই পারে তিনি বহুগুণের অধিকারী। সব মিলিয়ে তিনি একজন নিষ্ঠাবান সাহিত্যপ্রেমী। সাহিত্যের প্রতি তার দরদ আছে। আছে দায়বদ্ধতাও। এ দায়বদ্ধতা একজন সাহিত্যিকের থাকতে হয়। একজন লেখককে তার নিজের সত্য আবিষ্কার করতে হয় এ দায়বদ্ধতা থেইে।

যারা নিজের সত্য আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হন- তারা নিজ সমাজের গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে আঁকড়ে ধরতে চান। নিজের কাছে সত্য বলে প্রতিভাত না হলে অনুরাগ বা বিরাগের শক্তি পাওয়া যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই সত্যকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন কিছু কর্তৃপক্ষ যার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া সাধারণ লেখকদের পক্ষে হয়ে ওঠে না। আর যিনি এসবের মধ্য থেকে নিজেকে ভেঙে নতুন রূপে আবিষ্কার করতে পারেন তিনিই হন সমৃদ্ধ। সাহিত্যকে করেন ঋদ্ধ। বীরেন মুখার্জী যেটি পেরেছেন। প্রকৃতি হয়ত একজন বীরেন মুখার্জীকে কবি বানিয়েছে। কিন্তু চলার পথে নিজস্ব স্বর তৈরি করতে হয়েছে নিজেকেই। সাহিত্যের প্রতি একাগ্র-বাসনা তাকে ঋষি বানিয়েছে। সদালাপী, বন্ধুবৎসল ও সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি ব্যক্তিজীবনেও কবিতার মতোই গোছালো। পরিপাটি। পোশাক ও চালচলনে রয়েছে তারুণ্যের ছাপ। তার উচ্ছ্বলতা দেখলে কখনোই বোঝা যাবে না তিনি এরইমধ্যে ৫০ বসন্ত পার করে ফেলেছেন। যে কেউই বলবেন- তার জন্য এ বয়স মানানসই নয়। কবি বীরেন মুখার্জীর জন্ম ১৯৬৯ সালের ৪ মার্চ। মাগুরার শালিখা উপজেলার দরিশলই গ্রামে।

বীরেন দার সঙ্গে পরিচয়ের দিন ক্ষণ ঠিক মনে নেই। তবে এরও আগে যে তার কবিতার সঙ্গে সখ্যতা হয়েছিল এটা স্পষ্টই মনে আছে। পরিচয়ের পর থেকে তিনিই আদর দিয়ে আগলে রেখেছেন। দিয়েছেন স্নেহমাখা ভালোবাসা।  একেবারে শর্তহীন ভালোবাসা। বিনিময়ে আমি কিছুই দিতে পারিনি। কখনও ন্যূনতম ধন্যবাদটিও নয়। আমি ধন্যবাদের কারবারি নই। আবার অকৃতজ্ঞও নই। আজ সুযোগ এসেছে; তাই ক্ষুদ্রাকারে বলার প্রয়াস। আজ তার জন্মদিন। জন্মদিন একটা উপলক্ষ্য। এ উপলক্ষ্যের বাতাবরণে বলি- তারুণ্য থাক কবির জীবন জুড়ে। নানা রঙে অঙ্কিত হোক তার সাহিত্যের ভুবন। জন্মদিনে বীরেন দা’র জন্য রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।