জয়তু বাংলাদেশ পুলিশ

১ মার্চ, ২০২০। একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল।

১.
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আব্বু জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাচ্ছো?

আব্বু: কেন, কি হয়েছে?

অল্প কথায় ব্যাপারটা হলো, আমার প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স হারিয়ে গেছে। নতুন করে পেতে হলে হারিয়ে গেছে এই মর্মে একটি জিডি লাগবে।

আব্বু বললেন, ওরা তো অনেক চার্জ করতে পারে। দেখ, কিভাবে ম্যানেজ করবে।

আমারও এরকম ধারনা, হয়তো কিছু খরচ হবে। আমার অফিস ম্যানেজার ওরমটাই বলেছিল। এক সাংবাদিক বন্ধু তো বলেই দিল তিন থেকে পাঁচশ তো লাগবেই। বাংলাদেশ-এ কোন কিছু কি টাকা ছাড়া হয়?

২.
বহুদিন পর, তা প্রায় দুই যুগ হবে। ধানমন্ডি মডেল থানায় ঢুকলাম। প্রবেশদ্বারে উপস্থিত ডিউটি পুলিশ সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি সাহায্য নিবেন?” বললাম, জিডি করবো। দোতলায় উঠে বামে সোজা গিয়ে ডিউটি অফিসারকে বলেন।

দোতলায় প্রবেশ মুখে ডেস্কের পেছনে দাঁড়ানো বন্দুক হাতে আরেক ডিউটি পুলিশ। হাসি মুখে সালাম দিলেন। জিডি করবো জানাতেই, ইশারায় পথ দেখিয়ে দিলেন।

৩. ডিউটি অফিসারের কক্ষ। তিনজন অফিসার স্ব স্ব টেবিলে আছেন। একজন ব্যস্ত তার সামনে উপস্থিত এক ভদ্র নারী ও ভদ্রলোক কে নিয়ে। দ্বিতীয় জন বয়সে তরুণ। আমাকে ইশারায় বসতে বলে জিজ্ঞেস করলেন কী ভাবে সাহায্য করতে পারি? বললাম, প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স হারিয়ে গেছে। একটা জিডি করবো। 
কোথায় হারিয়েছে? মানে কোন ঠিকানা বা এলাকা থেকে? আমি বললাম, ঠিক কোথা থেকে হারিয়েছে বলা মুশকিল, অফিস বাসা সব জায়গায় খুঁজলাম। আমার অফিস কলাবাগান উত্তর ধানমন্ডি এলাকায়।
এ কথা শুনে তৃতীয় অফিসার বললেন, তা হলে আপনাকে কলাবাগান থানায় যেয়ে জিডি করতে হবে। ঘটনা যে এলাকায়, জিডি সেখানেই করার নিয়ম।

আমি আসলেই জানতাম না, কলাবাগানের জন্যে নতুন থানা হয়েছে। আর ওই থানাটা পান্থপথের উপর বসুন্ধরা মলের আড়াআড়ি। ভিড় ঠেলে ওদিকে যাবার আমার একদম ইচ্ছে নেই। অগত্যা মিনতি করে কিছু করা যায় কি না জানতে চাইলাম।

আপনি কোন এলাকায় থাকেন? আমি জানালাম ধানমন্ডি।
একটা উপায় আছে। জিডিতে যদি লেখেন বাসা থেকে হারিয়েছে তাহলে আমরা নিতে পারবো আর আপনাকে কষ্ট করে অতদূর যেতে হবে না।

এদিকে মনে মনে ভাবছি, কেউ কি আর উপরি উপার্জন হাত ছাড়া করতে চায়!

আমি রাজী হওয়াতে, তরুণ আফিসারটি ছাপানো দরখাস্ত আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে কি কি করতে হবে দেখিয়ে দিলেন। শুধু তাই নয়, আমাকে যথা সম্ভব সাহায্য করতে মোটামুটি একটা ডিক্টেশনও দিয়ে দিলেন।

আমার লেখা আর স্বাক্ষর হয়ে গেলে অত্যন্ত তড়িৎ গতিতে তৃতীয় ডিউটি অফিসার-এর কাছ থেকে জিডি নম্বর, তার স্ট্যাম্প ও স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে আমার কপি বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, আপনার কাজ শেষ।

চটপটতায় আমি পুলকিত। এবার তো খরচের পালা। জিজ্ঞেস করলাম কত দিতে হবে?

আফিসার আমাকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলল জিডি করতে কোন ফি লাগে না। আপনাকে কিছুই দিতে হবে না।

আমি বিহ্বল। এটা কেমন যেন অপ্রত্যাশিত। আমি কি ঠিক শুনলাম? কয়েক মুহূর্তের জন্যে চকচক চোখে বাক্রুদ্ধ আমি আফিসারটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। প্রাণঢালা ধন্যবাদ দিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এলাম বিশাল এক তৃপ্তি নিয়ে। জয়তু বাংলাদেশ পুলিশ।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন