অনলাইন ডেস্ক : বই মানুষের প্রিয় বন্ধু। বই মানুষকে হাসায়, কাঁদায় আবার আনন্দ দেয়। বই কখনও কাউকে ছেড়ে যায় না। তবে সম্প্রতি সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় বড়দের সঙ্গে শিশুরাও বই থেকে মুখ পিরিয়ে নিচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে বইগুলো পড়লে শিশুর জ্ঞানের ভাণ্ডার আরও বিকাশিত হবে।

তবে অনেক অভিভাবক যদিও বুঝতে পারছেন গল্পের বই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে, কিন্তু অনেক সময় দেখা যাচ্ছে- সমস্যাটা থেকে যাচ্ছে শিশুর দিক থেকে। স্মার্টফোন, কার্টুন আর মোবাইল গেমের কারণে অনেক শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে।

বই পড়াকে আমরা সবসময় একটু অন্যভাবে দেখি। একবার ভাবুন তো, সাদা পৃষ্ঠায় কালো কালিতে দেয়া আঁচড়গুলোর ওপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে যাওয়ার সময় আমরা কিভাবে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাই। চোখ বুজলেই যেন দেখতে পাই চরিত্রগুলোকে। এখানে মূল সার্থকতা লেখকের। তাই তো আমরা নতুন প্রজন্মকে এই অসাধারণ কল্পনাশক্তির বীজ তুলে দিতে পারলে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হবে সারা পৃথিবী।

আসুন জেনে নিই শিশুর জ্ঞানকে বিকাশিত করতে হলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন যেভাবে-

শিশুর মনে প্রশ্ন জাগ্রত রাখুন

শিশুরা একটু বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের সব কিছু নিয়ে জানতে চায়। তার চোখে থাকে রাজ্যের বিস্ময়। এ সময় আপনার কাজ হবে তার জানতে চাওয়া প্রশ্নের ক্রমাগত উত্তর দেয়া। এখানে লক্ষ্য রাখার বিষয় হচ্ছে- তার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে যেন আপনি ক্লান্ত হয়ে না যান। এবং রেগে গিয়ে তাকে ধমক না দেন। আপনি তার এই উৎসুক মনটার সাহায্য নিয়েই তার সঙ্গে বইয়ের সম্পর্ক জুড়ে দিতে পারেন খুব ছোট বয়সেই!

নিয়মিত বই পড়ার আগ্রহ

যখন সে আশপাশের সব কিছুর সঙ্গে বইয়ের মিল খুঁজে পাবে, তখন সে আপনা-আপনিই বইয়ের সঙ্গে লেগে থাকবে দিনরাত; অনেকটা সময় কাটাবে ছবিগুলো চিহ্নিত করতে করতে।

এখন আপনার কাজ হবে তার জন্য নতুন নতুন বই কিনে আনা। এতে করে দেখবেন নতুন আসার পূর্বেই সে আগের বইগুলো আপাদমস্তক দেখে ফেলেছে। এবং নতুন বই আসার জন্য দারুণ উদ্যমে অপেক্ষা করছে!

গল্পের বই তাকে পড়ে শোনান

শিশুর বয়স যদি ২-৬ বছরের মধ্যে হয়, তা হলে নিয়ম করে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি করে গল্পের বই তাকে পড়ে শোনান। সারা দিন নানা কাজ করে ক্লান্ত শরীরে হয়তো ভাবেন একটু বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু ভেবে দেখুন প্রতিদিন কিন্তু শিশু ঘুমের সময় আপনি তার সঙ্গেই শুয়ে সাধারণত ঘুম পাড়ান। এই কাজটিই এখন শুধু করুন– কেবল ঘুমানোর আগে ১৫ মিনিট হলেও একটি বই তাকে পড়ে শোনান। এতে করে তার স্মার্টফোন বা কার্টুনের প্রতি আকর্ষণ কমতে থাকবে এবং আপনিও শিশুর সঙ্গে চমৎকার কিছুটা সময় কাটাতে পারবেন।

জন্মদিনে বই উপহার দিন

শিশুর জন্মদিনে বেশিরভাগ অভিভাবক খেলনা উপহার দিয়ে থাকেন। তবে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে ছোটবেলায় শিশুর জন্মদিনে বই উপহার দিন। এতে করে আপনার সন্তানও বইয়ের প্রতি আপনি যে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন সেটি বুঝবে এবং ধীরে ধীরে নিজের মধ্যেও বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে।

আগামী জন্মদিনে তাই আপনার শিশুকে বই কিনে দিন। অন্য কারোর জন্মদিনে গেলে তাকে বই উপহার দিন।

বই বাছাই করুন

অনেক সময় শিশুরা বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কারণ বইগুলো তাদের বয়স উপযোগী হয় না। তাই সঠিক বইটি বাছাই করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

শিশুর বয়স যদি ৪-৫ বছরের নিচে হয় তা হলে এমন বই কিনুন যেখানে একটি পৃষ্ঠায় ৩-৪ লাইন করে থাকে। ছোট শিশুদের জন্য আরও কম লাইন হলে ভালো হয়। কালারফুল বই হতে হবে অবশ্যই। লেখার ভাষা হতে হবে খুব সহজ।

সঠিক নিয়মে বই পড়ে শোনান

অনেক সময় সঠিক নিয়মে বই পড়ে না শোনানোর জন্য শিশুদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হয় না অথবা কিছু দিন পর মরে যায়। শিশুদের কিন্তু কোনো বিষয়েই বেশি দিন মনোযোগ থাকে না। তাই নতুন ধরনের বই দিতে হবে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে- তাকে সঠিক নিয়মে বই পড়ে শোনাতে হবে।

প্রতি মাসে শিশুকে একবার বই কিনতে নিয়ে যান

শিশুকে সঙ্গে নিয়ে বই কেনার অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারলে আপনার শিশুটি পাঠক হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সপ্তাহের বন্ধের দিনগুলোতে আপনার সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন বইয়ের দোকান থেকে ঘুরে আসুন। এতে করে সে যেমন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাবে, যা তাকে বইয়ের প্রতি আরও আগ্রহী করবে, একই সঙ্গে বইয়ের দোকান এবং লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রতিও আগ্রহী করবে।

নিজস্ব বইয়ের সংগ্রহ

আপনার বইয়ের তাকটি যদি আপনার পছন্দের বইয়ের সংগ্রহে পূর্ণ থাকে, সে নিজেও তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি তৈরি করতে ইচ্ছুক হবে । তার রুমে একটি বইয়ের তাক রাখুন অথবা তাকে আপনার নিজের বইয়ের তাক বা আলমারি থেকে কিছু জায়গা করে দিন। সে হয়তো সযত্নে তার পছন্দের বইগুলো তার জন্য রাখা জায়গাটিতে সাজিয়ে রাখবে। এতে করে সে বইয়ের যত্ন নেয়া শিখবে এবং বই পড়ার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে।