অনলাইন ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় তিনমাস ধরে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে বন্দি আছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি মুক্তি পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় প্রশ্ন উঠছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না। দলের নেতারা রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে তারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবেন না। বিএনপি নেতারা আবার নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছেন। শর্ত না মানলে নির্বাচনে যাবে না বলে হুমকি দিচ্ছে দলটি। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, তবে নির্বাচন নিয়ে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এজন্য আলোচনায় বসুন। আলোচনায় বসে আমাদের সব দাবি মানতে হবে তা বলছি না। আগে আলোচনায় বসুন। আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান করে নির্বাচন দিন। এটা না করে যদি নির্বাচনে যান, তাহলে কেউ তা মেনে নেবে না।

অপরদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে সরকারকে চারটি শর্ত দেন। শর্তগুলো হলো- নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন বেগম খালেদা জিয়া, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে নির্বাচন।

গত শনিবার কারাগারে মির্জা ফখরুল ইসলামসহ স্থায়ী কমিটির তিন নেতা কারাগারে সাক্ষাত্ করতে গেলে বেগম খালেদা জিয়া চলমান ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে দল নির্বাচনে যাবে কি-না সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বেগম জিয়া।

এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্র। কোন পার্টি নির্বাচন করবে, কোন পার্টি নির্বাচন করবে না, এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোর্ট রায় দিয়েছেন। এখানে আমাদের কাছে দাবি করে তো কিছু হবে না। যেখানে কোর্ট রায় দিয়েছেন, আইনগতভাবে যেহেতু কারাগারে গেছে। আইনগতভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।

এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মন খারাপ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যে সমস্যা আছে, সেই সমস্যার আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) সমাধান করতে হবে। সংকটের সমাধান না করে যদি নির্বাচনে যান, তাহলে নির্বাচন কী হবে? যা হবার তাই হবে। যেটা করেছেন ২০১৪ সালে, তাই হবে। ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এভাবে তো এবার নির্বাচন হবে না। কতবার জেলে দেবেন, কতজনকে মারবেন, কতজনকে গুম করবেন- করতে পারেন। এবার এ ধরনের নির্বাচন এদেশের মানুষ মেনে নেবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন থামানো যাবে না। খালেদা জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বোঝা গেছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের সব পথ বন্ধ করে নির্বাচন দেওয়া হবে। এ রকম নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কেন?

রুহুল কবির রিজভী বলেন, পিঠা ভাগের মতো সংসদীয় আসনের সিংহভাগ আওয়ামী লীগ নিজেদের কব্জায় রেখে বাকি স্বল্পসংখ্যক আসন অন্যদলকে ভাগ দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। আসন ভাগাভাগির নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। যতই চেষ্টা করেন না কেন ভাগাভাগির নির্বাচন এদেশের জনগণ হতে দিবে না। এদিকে ২০ দলীয় জোটের নেতারা একাধিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে তারা নির্বাচনে যাবেন না।

এদিকে পরবর্তী কর্মকৌশল প্রণয়নে গতকাল শুক্রবার বিএনপি স্থায়ী কমিটি বৈঠক করেছে। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমরা পর্যালোচনা করেছি। আমাদের নেতৃবৃন্দ আগামীতে করণীয় কী আছে সে সম্পর্কে মতামত বলছেন। আগামীতে বিএনপি ও গণতান্ত্রিক শক্তি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য কীভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও তার মুক্তি এই বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।