ছবিঃ অন্তর্জাল (প্রতীকী)

পৃথিবীর ময়ূরেরা

পৃথিবীর ময়ূরেরা ক্রমে ঘুঘু হয়ে যায়। একটি নামের ধারে উদ্গত হয় পুরুষপাখি। কামনার ঝাড়ে ফুরিয়ে গেলে নৃত্য—নিভে যায় দৃশ্য, দৃশ্যের অপর পারে নিভে যায় চোখ। এই চোখ নক্ষত্রের ক্ষত অক্ষে ধরে দেখে ফেলে অন্ধকারের অজানিত ঘ্রাণ, ঘ্রাণের আড়ত। তেমাথা পথের ধারে চির দণ্ডিত একটি ডাক-বাকশের লেলিহান জিভ জানে তৃষ্ণার প্রকার। ক্ষয় হয় ধ্যান, ক্ষয় হয় ত্রিবেণী মাকাল। নামের রূপ জানে না রক্তলগ্ন পাথর। আর পাথরের পাশে বিচূর্ণ পড়ে থাকে একটি দিঘল শ্বাস।

অক্ষরের বিষ

এই হরিণ প্রতি রাতে চুরি করে নিয়ে যায় অরণি। তোমরা ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। তার চেয়ে শিমপাতার রঙে শাদা শাড়ির পাড়ে এঁকে নাও মাছের চোখ ও কণ্টক, তার চোখের নিচের কালি। মাছ নিষ্পলক পাহারা দেবে প্রিয়তম কাম। অরণিকাঠে কিছুই লেখা থাকে না, কেবল ঘষা খেয়ে জ্বলে উঠতে পারে এক দান। এটা আসলে হরিণের খেলনাকাঠি। তোমরা তার চেয়ে উপগত হও নির্মোক অক্ষরে। অক্ষরের বিষে যে অমৃত ধরা আছে—খুঁজে নাও। এই হরিণ মায়ামৃগ।

চাঁদ ও চন্দ্রমল্লিকা

চাঁদ ও চন্দ্রমল্লিকার নামে একটা খুন করেছি। হাতে রক্ত লেগে গেছে। ছত্রিশবছর ধরে এত ধুচ্ছি, তারপরও হাত লাল হয়ে আছে। জেনেছি তোমার পায়ে এই লালে অলক্তরাগ পরালেই আমার হাত ফিরে পাবে পূর্বের সকল বর্ণ। সেই কবে থেকে একটা সবুজ পেয়ারার বুক চিরে তার মধ্যে ঢুকে বসে আছি! আকাশজুড়ে ছায়া মেলে আছে গড়ুরের ডানা। পাতালে গলে যাচ্ছে বিভীষণের শব। আর তুমি আসো না। হাতে রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক যন্ত্রণার। কেন পৃথিবীতে এখনো তোমার জন্ম হয় না?

হলুদ পাখি

আসো, বাতাস চিরে দেখো কতো আছে হাওয়ার ছল। শাদাশাড়ির পাড়ে গেঁথে ফেলো পতঙ্গদল। একটা হলুদ পাখি আটকা পড়ে আছে স্বর্ণলতার জালে। তার চিঁচিঁ চিৎকারে ঘন হচ্ছে গোধূলি। তোমার মুঠোর ভিতর একমুঠো ধূলি। তোমার কান ঢেকে গেছে ঝড়ের ডাকে। স্বর্ণলতার জাল আড়াল হয়ে আছে সন্ধ্যার পরজীবী ছায়ায়। তোমরা দুজন, পাখি ও পালক—ভিন্ন হয়ে আছো বাহির দরজায়। কী করবে এখন? নিজের ওষ্ঠাধর কামড়ে শুষে নাও সমুদ্র। তৃষ্ণা ফুরিয়ে গেলে শঙ্খধ্বনি ডাকবে, আয়। তারপর চাইলে পালিয়ে যেতেও পারো। হলুদ পাখি সেতো তোমার আত্মজ কেউ না!