গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মানাধীন পায়রা তাপ
বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিক অসন্তোষে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও হত্যার
অভিযোগে কলাপাড়া থানায় বৃহস্পতিবার রাতে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা
হয়েছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা পরিচালক ওয়াং লিবিং বাদী
হয়ে অজ্ঞাত এক হাজার জনকে আসামী করে এ দুইটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য আট শতাধিক পুলিশ সহ বিজিবি,
র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কলাপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক মো: শাখাওয়াত জানান, পুলিশ ইতোমধ্যে কলাপাড়া
থেকে সুজন তালুকদার, মামুন তালুকদার, সজিব, জলিল ফকির কে এবং ঢাকার
কেরানিগঞ্জ এলাকা থেকে নাসির, সুজন, আবদুল লতিফ, আতিকুর রহমান, ইমাম
হাসান, মেহেদী হাসান, রাসেল আলী, শামিম মিয়া, মামুন, আইয়ুব, ফারুক ও
বেল্লাল কে আটক করেছে। এদের সবার বাড়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় বলে জানান
তিনি।

কলাপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক মো: শাখাওয়াত জানান, চায়না শ্রমিক মি: জাং
ইয়ান ফেং হত্যার ঘটনা তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ মামলার আরও ২০/২৫ জন আহত
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ মামলায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব
হয়নি।

কলাপাড়া থানার ওসি মো: মনিরুল ইসলাম জানান, পুলিশ ইতোমধ্যে পায়রা তাপ
বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে লুট হওয়া ল্যাপটপ, সিপিইউ,
মনিটর ও লাগেজ সহ চার জন এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে ১২ জনকে
গ্রেফতার করেছে। এছাড়া নিহত বাংলাদেশী শ্রমিক সাবিন্দ্র দাসের মৃহদেহ তার
পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সাবিন্দ্র’র দুর্ঘটনা জনিত মুত্যর
ঘটনায় ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার (১৮জুন) বিকেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রর ব্রয়লার থেকে পড়ে নিহত
বাঙ্গালী শ্রমিক সাবিন্দ্র দাস (৩৩) এর লাশ গুম করার গুজবে মঙ্গলবার
বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি বাঙ্গালী ও চায়না শ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায়
সংঘর্ষে চায়না শ্রমিক জাং ইয়ান ফেং (২৬) নিহত হয়। এসময় চায়না শ্রমিক,
পুলিশ সহ অন্তত: ১৫ জন আহত হয়েছে এবং সংঘর্ষের ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিকের
মোটর সাইকেল ভাঙচুর করা সহ ভিডিও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহিংসতার ঘটনায় বিসিপিসিএল’র কর্মকর্তা শাহমনি জিকো
জড়িত থাকার অভিযোগ করেন বাঙালী শ্রমিকরা। এরপর মঙ্গলবার রাতে জেলা
প্রশাসনের নেতৃত্বে পুলিশ, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ যৌথ ভাবে বিদ্যুৎ
কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। বুধবার সকালে বিদ্যুৎ
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সচিব, এমডি, বরিশাল ডিআইজি সহ সরকারের উচ্চ
পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের নিয়ে
বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের দাবী
মেনে নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন তারা। কিন্তু ঘটনার পর থেকে এ রিপোর্ট
লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মামলা ও গ্রেফতার
আতংকে বাঙ্গালী শ্রমিকরা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা ত্যাগ করছেন।