অনলাইন ডেস্ক : চট্টগ্রামে ডিশ লাইন ব্যবসা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকালে চকবাজার থানার ডিসি রোডের কালাম কলোনির সামনে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবলীগ কর্মী ফরিদুল ইসলাম ফরিদের (৪০) বুকে গুলি লাগে। চমেক হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে অর্ধশত সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কেসিটিএন ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের লাইন দখলে নেয়।

এতে নগর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙিয়ে কথিত আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মুছা ও ছাত্রলীগ নামধারী রিয়াজ চৌধুরী রাসেল, মুরাদ, সারোয়ার, মজনু ও মাসুদ নেতৃত্ব দেয়। ডিসি রোড কবরস্থান থেকে মিয়ার বাপের মসজিদ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সন্ত্রাসীরা।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ফরিদসহ কয়েকজন এ কাজে বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ফরিদকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় সন্ত্রাসী রাসেল। এতে ফরিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাÍক আহত হয়। চমেক হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম জানান, বাকলিয়া এলাকা থেকে ফরিদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ মর্গে নেয়া হয়েছে। ফরিদ চকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

তবে বর্তমানে কোনো পদে না থাকলেও যুবলীগের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন। চানমিয়া মুন্সি রোড এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে ফরিদ। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপ সমর্থিত যুবলীগ কর্মী বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কেসিটিএনের (কাশেম ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক) মালিক শ্যামল কান্তি পালিত, এমদাদুল হক ও প্রসূন কান্তি নাগ। তাদের মধ্যে এমদাদ বিএনপি নেতা।

তিন-চার মাস আগে কথিত আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মুছার নেতৃত্বে লোকজন কেসিটিএনের মালিকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। ডিসি রোডে তারা যেন ডিশ ব্যবসা না করে এ জন্য হুমকি দেয়া হয়। এসব হুমকি পাওয়ার পর তারা চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেন।

ঘটনার পর চমেকের জরুরি বিভাগে প্রসূন কান্তি যুগান্তরকে বলেন, কথিত আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মুছা ও তার বাহিনীর অব্যাহত হুমকির পর আমরা চকবাজার থানায় বিষয়টি জানাই। এরপর বিষয়টি ডিসি (দক্ষিণ) মোস্তাইন হোসাইনকে জানাই। এরপর ডিসি চকবাজার থানার ওসিকে বলার পর পুলিশ পাঠানো হয়।

ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার পরও মুছার লোকজন ডিশলাইন দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। সবাই জুমার নামাজে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু জুমার নামাজের পর মুছার লোকজন আবারও ডিশলাইন দখলে নিতে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মুছার লোকজন গুলি চালায়। এতে ফরিদের বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ব্যাপারে উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাইন হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ডিশ ব্যবসার দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

ফরিদের মেয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্রী জারা ইসলাম বলেন, ‘বাবা দুপুরে ভাত খেতে বাসায় এসেছিলেন। এ সময় একটা ফোন এলে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরই আরেকটা ফোন আসে। কেউ একজন আমাদের মেডিকেলে আসতে বলে। হাসপাতালে এসে দেখি আব্বু মৃত।’

চমেক হাসপাতালের অবস্থা: ডিশের লাইন দখলকে কেন্দ্র করে ফরিদের গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ডিসি রোড, চকবাজার ও গনি কলোনি এলাকা থেকে তার লোকজন হাসপাতালে জড়ো হয়। এ সময় জরুরি বিভাগে ফরিদের আত্মীয়স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জরুরি বিভাগে তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জরুরি বিভাগের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অনেকে ফরিদের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।