পর্যটন নগরী কুয়াকাটার বেশ কিছু আবাসিক হোটেলের
অভ্যন্তরে জুয়া, নারী ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। এক শ্রেনীর
প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নির্বিঘ্নে এ ব্যবসা
পরিচালনা করছে। আবাসিক হোটেল যমুনা, হোটেল পাঁচ তারা, ওমর খাঁন সহ নিন্ম
মানের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে এ বে-আইনী কর্মকান্ড চলছে। এসব অনৈতিক
ব্যবসার সাথে ক্রমশ: জড়িয়ে পড়ছে শিশু, কিশোররাও। পুলিশ মাঝে মধ্যে
দু’একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে পতিতা ও দালালদের আটক করলেও জামিনে
বেরিয়ে এসে এরা আবার পুরনো ব্যবসায় ফিরে আসছে। এতে বন্ধ হচ্ছেনা বে-আইনী
এসব কর্মকান্ড। এছাড়া চুনোপুটিদের আবাসিক হোটেলে অভিযান চালানো হলেও
প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন হোটেল গুলো অধরাই থেকে যাচ্ছে।

জানা যায়, সাবেক লাকী হোটেল বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে ’যমুনা হোটেল’ নাম
দিয়ে কুয়াকাটায় দীর্ঘদিন ধরে এসব কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। সম্প্রতি
(৯ডিসেম্বর) যমুনা হোটেল থেকে পতিতার দালাল ইলিয়াস হাওলাদার, হোটেল
ম্যানেজার মো: আল আমিন, যৌনকর্মী মিম আক্তার ও মরিয়ম আক্তার কে আটক করে
মহিপুর থানা পুলিশ। এর আগে ওই হোটেল থেকেই ৬ পতিতাকে আটক করে থানা পুলিশ।
তবে যমুনা হোটেলের মালিকের আত্মীয়ের পরিচয়ধারী সাইফুল এবং পতিতা ও মাদকের
সম্রাট জাহিদকে পুলিশ ধরতে পারেনি। এদের নেতৃত্বে যমুনা হোটেল থেকে
বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নারী ও মাদক পাচার করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কুয়াকাটা ভূঁইয়া মার্কেটের সভাপতি মোঃ নিজাম হাওলাদার জানান, যমুনা
হোটেলের ভাড়াটিয়া মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন নারী, মাদক, জুয়ার
সাথে জড়িত রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

অপরদিকে কুয়াকাটা ইলিশ পার্ক সড়কে অবস্থিত আবাসিক হোটেল পাঁচ তারা। ওই
হোটেলটিতে জুয়া, মাদক ও পতিতা ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে। ট্যুরিষ্ট পুলিশ
ও থানা পুলিশ এর আগে কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে হোটেলটিতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় মানুষ জানান, পাঁচ তারা
হোটেলের রয়েছে একাধিক দালাল। এরা কমিশনে হোটেলে কাষ্টমার জোগার করে দেয়।
হোটেলটির মালিক আলীপুর মৎস্য বন্দরের একজন প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ী।
সেই সুবাদে চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা এলাকার সমুদ্রে মাছধরা ট্রলারের
মালিক ও মাঝিরা ওই হোটেলে এসে বোর্ডার সেজে ওঠে। এরপর মাদক, নারী ও জুয়ার
আসর বসায়। হোটেল কর্তৃপক্ষ সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী নেতা
হওয়ায় এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস পায় না।

যমুনা ও পাঁচ তারা হোটেল ছাড়াও নিন্ম মানের একাধিক আবাসিক হোটেলে মাদক,
জুয়া ও পতিতা ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে। এসব আবাসিক হোটেলের নিরানব্বই
ভাগই নির্মাণ করা হয়েছে পরিকল্পনাবিহীন বে-আইনী ভাবে। কুয়াকাটা উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে এসব হোটেল গুলো। এছাড়া
কিছু প্রথম শ্রেণীর আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধেও রয়েছে নারী, মাদক ও জুয়ার
আসর বসানোর বিস্তর অভিযোগ।

কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ
মোতালেব শরীফ বলেন, ’নিন্ম মানের কিছু আবাসিক হোটেলে মাদক, নারী সহ
অসামাজিক কাজ চলে বলে তাদের কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে। এসব হোটেল
গুলো তাদের এসোসিয়েশনের আওতাভূক্ত না হওয়ায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে
পারছেন না তারা।’

মোতালেব শরীফ আরও বলেন, ’নিন্ম মানের আবাসিক হোটেল গুলোর মালিক ও
কর্মচারীরা গাড়ী থেকে নামার সাথে সাথে পর্যটকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে
ওইসব হোটেল গুলোতে নিয়ে যায়। তবে তিনি দাবী করেন ওনার্স এসোসিয়েশণের
অর্ন্তভূক্ত কোন হোটেলে অসামাজিক কাজ চলে না।’

মহিপুর থানার ওসি মো: সোহেল আহমেদ বলেন, ’অসামাজিক কাজের সাথে যেসব
আবাসিক হোটেল জড়িত রয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া
হবে। এরই মধ্যে যমুনা হোটেলে দুই দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। অসামাজিক
কাজে লিপ্ত ১০ নারী পুরুষকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ অভিযান
অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।’