দর্পণ ডেস্ক: কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১২ মার্কিন সেনা ও শিশুসহ অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। নিজ নিজ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল অনলাইন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশত্যাগের জন্য বিমানবন্দরের বাইরে অবস্থান করছিলেন আফগানরা। আফগানদেন কাবুল থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছিলো ডেনমার্কসহ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যেই বিমানবন্দরের অ্যাবে গেটের বাইরে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। এ সময় সেখানে প্রায় চার থেকে পাঁচশ মানুষ ছিলেন। প্রথম বিস্ফোরণের পর দূর থেকে গুলি চালায় আরেক হামলাকারী। এর কিছুক্ষণ পরই পাশের ব্যারন হোটেলের বাইরে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিস্ফোরণ পরবর্তী ভিডিওতে দেখা গেছে লাশের স্তূপ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বার মার্কিন সেনা ও শিশুসহ অন্তত ৯০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় শতাধিক। তাদের অনেককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেককে ঘটনাস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে ভিড়ের মধ্যে ঘটা বোমা হামলায় আহতের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। নিজস্ব বার্তা সংস্থা আমাক-এর এক প্রতিবেদনে হামলার দায় স্বীকার করে তারা। আমাক নিউজ এজেন্সির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ‘ব্যারন ক্যাম্প’ এলাকায় আত্মঘাতী বোমা নিয়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুবাদকদের এবং সহযোগীদের একটি বিশাল সমাবেশে পৌঁছে বিস্ফোরক বেল্টটি বিস্ফোরণ ঘটায় সে।

পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণ একটি নয়, দুইটি হয়েছে। একটি হয়েছে বিমানবন্দরের অ্যাবে গেটে। অন্যটি হয়েছে ব্যারন হোটেলে বা এর পাশেই। গেট থেকে সামান্য দূরেই অবস্থিত এই হোটেল। এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণে হতাহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মার্কিন সেনা সদস্য ছিলেন। এমনকি নিহতদের মধ্যে অন্তত ১২ মার্কিন নাগরিক থাকার কথা বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। আহত হয়েছেন আরও ১৫ মার্কিন নাগরিক।

বিস্ফোরণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএসআইএস-কে) আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ। হামলার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দর থেকে নাগরিকদের দূরে থাকার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া। আজকের হামলার পর তাই এর জন্য আইএসআইএস-কে দায়ী বলে ধারণা করছে দেশগুলো। তবে হামলার জন্য আসলে কে দায়ী তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২০১১ সালের পর আফগানিস্তানে এক ঘটনায় সর্বোচ্চ মার্কিন সেনা নিহতের ঘটনা ঘটল বৃহস্পতিবার। ওই বছর আগস্টে আফগানিস্তানে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৩০ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিলেন।
বিমানবন্দরের দিকে যাওয়া এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন, ‘এক মুহূর্তের জন্য আমি ভাবলাম আমার কানের পর্দা ফেটে গেছে। শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। ঝড়ের মতো পলিথিনের ব্যাগগুলো উড়তে থাকে। মানুষের লাশ এবং শরীরের অংশ বাতাসে ভাসতে দেখেছি। মৃতদেহ, শরীরের অঙ্গ, বৃদ্ধ এবং আহত নারী-পুরুষ ও শিশুদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি।’

তালেবানের সঙ্গে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির পর আফগানিস্তানে এই প্রথম মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটল।
বিস্ফোরণের পর যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ম্যাককেঞ্জি বলেছেন, আফগানিস্তানে এখনো প্রায় এক হাজার মার্কিন নাগরিক রয়েছে। তাই সেখান থেকে তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং এ বিষয়ের ওপর তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে অনেক পশ্চিমা দেশ মনে করছে, এই ঘটনার পর বেসামরিক লোকদের আফগানিস্তান থেকে নিয়ে আসার কার্যক্রমের ইতি ঘটেছে। হাজার হাজার আফগান নাগরিক যারা দুই দশক ধরে পশ্চিমাদের হয়ে কাজ করেছে তাদের ফিরিয়ে আনার আর কোনো পথ রইল না বলে মনে করছে অনেক পশ্চিমা দেশ।