দর্পণ ডেস্ক : ভারতে অভিবাসন বিষয়ে সর্বশেষ যে শুমারি হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে উগান্ডা থেকে আসা মানুষের সংখ্যা খুব দ্রুত গতিতে বাড়ছে। শুমারিতে দেখা যাচ্ছে উগান্ডা থেকে আসা মানুষের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞ চিনমে থামবে অবশ্য বলছেন কর্মকর্তাদের বড় ভুলের কারণেই এটা হয়েছে। ভারতীয়দের একটা দীর্ঘ যোগসূত্র আছে উগান্ডার সাথে।

১৮৯০ সালে প্রায় চল্লিশ হাজার ভারতীয় (প্রধানত পাঞ্জাবি) কে নেয়া হয়েছিল অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে উগান্ডায়। তাদের নেয়া হয়েছিলো কেনিয়ার মোম্বাসা থেকে উগান্ডার কাম্পালা পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের জন্য। পরে ১৯৭২ সালে সামরিক শাসন ইদি আমিনের আদেশে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।কারণ হিসেবে বলা হচ্ছিলো যে তারা উগান্ডার অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।

পরে আশি ও নব্বইয়ের দশকে অনেকে আবার উগান্ডায় ফিরে যান এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরবর্তীতে উগান্ডার অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন।দি ঘোস্ট এন্ড দি ডার্কনেস এবং দি লাস্ট কিং অফ স্কটল্যান্ডের মতো হলিউডের ড্রামাগুলোতে এসব প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে।

এখন ২০১৯ সালে এসে ভারত ও উগান্ডার মধ্যে তৃতীয় যোগসূত্র দেখা যাচ্ছে- নাটকীয়ভাবে এটা এসেছে ২০১১ সালের আদমশুমারি থেকে। প্রতি দশ বছরে এই শুমারি করা হয় তবে এর কিছু তথ্য এখন প্রকাশ করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত অভিবাসন বিষয়ক তথ্য থেকে জানা যায় ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে যারা উগান্ডাকে তাদের সর্বশেষ বসবাসের জায়গা হিসেবে উল্লেখ করেছেন তাদের সংখ্যা ২০১১ সালে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩৬৩ জন।

২০০১ সালে এই সংখ্যা ছিলো মাত্র ৬৯৪। বেড়ে যাওয়া সংখ্যার মধ্যে নারীর সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৭০০ যা আগে ছিলো মাত্র ৩৩৯। আর পুরুষ ৩৫৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৬৬৩।

দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার পর উগান্ডা থেকেই সবচেয়ে বেশি বা উগান্ডা ফেরত অভিবাসী বেশি হচ্ছে ভারতে। এটা হতে পারে উগান্ডার নাগরিক ভারতে আসছে বা ভারতীয় নাগরিক যারা উগান্ডায় ছিলেন তারা আবার ভারতে ফিরে আসছেন।

উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে এ ধরনের অভিবাসীর সংখ্যা ২০০১ সালের পাঁচজন থেকে বেড়ে ২০১১ সালে হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০৪।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ চিনমে থামবে বলছেন এ সংখ্যা হতে পারে শুমারিতে ভুলের কারণে বা এ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বৈশিষ্ট্য অগোচরে থেকে যাওয়ার কারণে।

দুটি বিষয় এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তিনি। একটি হলো সংখ্যার মধ্যে ব্যাপক লিঙ্গ অসমতা। আরেকটি বিষয় হলো ৭৭ হাজারের বেশি উগান্ডা অভিবাসী বা সেখান থেকে ফিরে আসা অভিবাসী ভারতে প্রায় দশ বছর ধরে বাস করে আসছিলো।

অথচ ২০০১ সালে তালিকাভুক্ত হয়েছিলো মাত্র ৬৯৪। তাই এখানে কিছু ভুল ছিলো বলে মনে হতেই পারে।

আবার শুমারি প্রশ্নমালা ছিলো একটি ছোট ডকুমেন্ট এবং ভারতীয়দের কেউ সর্বশেষ অন্য দেশে বসবাস করলে সেই দেশের নাম তথ্য গ্রহণকারীদের নিজে লিখতে হতো। পরে এসব তথ্য স্ক্যানড হয়ে কম্পিউটার সফটওয়্যারের মধ্যে ডেটা টেবিলে স্থান পেতো।

পরে ওই শিটগুলো ওয়েবে আপলোড হয়ে প্রকাশ হয়েছে। তবে একজন সিনিয়র শুমারি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, “অভিবাসীদের বিষয়ে এই সন্দেহজনক তথ্যের বিষয়টি তারা পরীক্ষা করে দেখছেন”।