প্রতীকী ছবি

ঘরের সিঁধ কেটে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় মা ও সন্তানদের জিম্মি করে এক নারীকে গণধর্ষণের আলামত পায়নি মেডিকেল বোর্ড। গতকাল বুধবার ডাক্তারি পরীক্ষার এ প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এদিকে আলামত না পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ওই নারী।

অন্যদিকে, আজ বৃহস্পতিবার গণধর্ষণের এ ঘটনায় কুমিল্লা থেকে জামাল উদ্দিন (২৮) নামে আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। গ্রেপ্তারকৃত জামাল উদ্দিন নবগ্রাম এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারের পর জামালকে কুমিল্লা থেকে নোয়াখালী গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হচ্ছে। গণধর্ষণের ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলেও জানান ওসি।

এর আগে, গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মামলার প্রধান আসামি জাকির হোসেন জহিরের দেওয়া তথ্যমতে ভিকটিমের আত্মীয় আবদুর রব মান্না, হারুন অর রশিদ ও সেলিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জহির আদালতে ১৬৪ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনায় তিনিসহ পাঁচজন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। বর্তমানে ভিকটিমের তিন আত্মীয় ডিবি কার্যালয়ে ৪দিনের রিমান্ডে রয়েছে।

নির্যাতিতা ওই নারীর দাবি, ঘটনার সঙ্গে রিমান্ডপ্রাপ্তরা কেউই জড়িত না। আসামি জাকির হোসেন জহির মনগড়া জবানবন্দি দিয়ে তার নিরপরাধী আত্মীয়দের ফাঁসিয়েছে। তাদের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে একটি আবেদনও করেছেন ধর্ষণের শিকার ওই নারী।

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইব্রাহিম খলিল জানান, হাসপাতালে ভিকটিমের প্যাথলোজিক্যাল ও শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার পর পরিষ্কার পরিছন্ন বা অন্য কোনো কারণে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে গেছে।’

ডাক্তারি পরীক্ষায় আলামত না পাওয়ার বিষয়ে নির্যাতিতা ওই নারী জানান, ঘটনার দিন রাতে তিনজন তার মুখে কম্বল চাপা দিয়ে গণধর্ষণ করেছে। শরীরে এখনো নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে, চলাফেরা করতে সমস্য হচ্ছে তার। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমদিন ও পরে আরো একদিন চিকিৎসকরা তার কাছ থেকে মোট দুইবার আলামত নিয়েছিলেন। ঘটনার দিন পরনে থাকা কাপড়গুলো তিনি ওইদিনই পুলিশের কাছে জমা দিয়েছিলেন বলেও জানান ওই নারী।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জহিরের নেতৃত্বে কয়েকজন আবুল হোসেনের ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে কয়েকজন মুখোশ পরা ছিল। এ সময় তারা আবুল হোসেনের স্ত্রীর কাছে ৬০ হাজার টাকা আছে বলে সেগুলো দিতে বলে। এ নিয়ে ভিকটিমের সঙ্গে তাদের তর্কবির্তকে এক পর্যায়ে তারা ঘরের বৈদ্যুতিক লাইট বন্ধ করে ভিকটিমের মা ও তিন সন্তানকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পালাক্রমে ভিকটিমকে গণধর্ষণ করে। পরে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ধর্ষকরা ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় তারা ঘরে থাকা নগদ টাকা, ২ ভরি স্বর্ণ, মোবাইল ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

পরের দিন দুপুরে ভিকটিমকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে জাকির হোসেন জহিরসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে।