অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল থেকে মধ্যরাতে তিন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতের ঘটনা আমাকে স্তম্ভিত করেছে, আমি স্তম্ভিত।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি দাবি জানান, মূল ঘটনা পরিষ্কার করে নিয়ম অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।

সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রীর ‘রগ কাটা’ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে তিন ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তিন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়নি। অভিভাবকরা ওই ছাত্রীদের বুঝানোর জন্য হল থেকে নিয়ে গেছেন।

ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের এমন আচরণে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায়। রাতে তিন ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘গতকাল রাতের ঘটনা আমাকে স্তম্ভিত করেছে, ‘আমি স্তম্ভিত। আমি অবাক যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরকম একটি আচরণ করতে পারে, এটা ভাবা যায় না।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ম ভেঙে অগ্রহণযোগ্য কাজ করেছে উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘কেউ যদি ভুল করে থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আমার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে কোথাও লেখা নেই যে, রাত ১২টার সময় কোনও ছাত্রীকে স্থানীয় অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া যায়। নিয়ম ভেঙে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এটা অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

ঠিক কী কারণে ছাত্রীদের বের করা হয়েছে, তা পরিষ্কার করে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান এই বিশিষ্ট নারী নেত্রী। তার ভাষ্য— ‘আমরা আশা করবো, ঘটনা আসলে কী হয়েছে, সেটা পরিষ্কারভাবে জানানো হবে। কারও যদি দোষ-ত্রুটি থেকে থাকে, তাহলে নিয়মসিদ্ধভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ধরনের আচরণ যেন অবিলম্বে বন্ধ হয়।’

প্রসঙ্গত, কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়ানো অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে সুফিয়া কামাল হল থেকে তিন ছাত্রীকে অভিভাবকদের সঙ্গে বের করে দেওয়া হয়। ওই তিন ছাত্রী হলেন—গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শারমীন শুভ, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার লিজা ও গণিত বিভাগের পারভীন। রাত ১০টার দিকে পারভীন ও লিজা এবং রাত ১২টার দিকে শুভকে হল ছাড়তে হয়। তাদের অভিভাবকরা এসে তাদের নিয়ে যান। এছাড়া পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিমির বাবা ধামরাই থেকে সুফিয়া কামাল হলে উপস্থিত হন রাত সাড়ে ১২টার দিকে। পরে তিনি একাই হল অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর মধ্যরাতেই সুফিয়া কামাল হলের সামনে বিক্ষোভ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গঠিত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘কোনও তদন্ত ছাড়াই হলের ছাত্রীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন সেই ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। এর প্রতিবাদে আমরা শুক্রবার (২০ এপ্রিল) সকালে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করবো। একইসঙ্গে আমরা হল প্রভোস্ট অধ্যাপক সবিতা রেজওয়ানা রহমানের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান  বলেন, ‘এশা নামের একজন শিক্ষার্থীর রগ কেটে দিয়েছিল বলে যে গুজব ১০ এপ্রিল ছড়ানো হয়েছিল, মোবাইল ফোন চেক করে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করেছি। যারা ওই ঘটনায় জড়িত ছিল, তাদের অভিভাবকদের হলে ডেকেছি। তাদের (অভিভাবকদের)ওই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভিডিওগুলো দেখানো হয়েছে। তখন অভিভাবকরা নিজেরাও লজ্জা পেয়েছেন এবং তারা স্বেচ্ছায় তাদের মেয়েদের নিয়ে গেছেন।’

একই দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের বের করে দেওয়া হয়নি। তিন ছাত্রীকে অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বের করে দেওয়ার কথাটা গুজব। এর মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। হল থেকে কাউকেই বের করে দেওয়া হয়নি।’

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বিপরীতে অবস্থিত কবি সুফিয়া কামাল হলটি নামকরণ করা হয় বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের মা কবি সুফিয়া কামালের নামে।

বাংলা ট্রিবিউন