অনলাইন ডেস্ক :
শিল্পের পর এবার আবাসিকেও গ্যাসের নতুন সংযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে ইতিমধ্যে ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়ে গেছে অর্থাৎ সংযোগের জন্য টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষারত আবেদনকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। যেসব বহুতল ভবনে ইতিমধ্যে সংযোগ রয়েছে কিন্তু ভবনের সম্প্রসারিত অংশ বা বর্ধিত ফ্ল্যাটগুলোতে গ্যাস নেই সেগুলোতেও সংযোগ দেয়া হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আগামী মে মাসের শেষ দিকে জাতীয় গ্রিডে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস যুক্ত হবে। এতে গ্যাসের বিদ্যমান সংকট কিছুটা কমবে। সারাদেশে বিদ্যুৎ সংযোগের সংখ্যা ও গতি বেড়েছে। শিল্পে গ্যাস সংযোগে এতদিন যে নিয়ন্ত্রণ ও বাধা ছিল তা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এবার আবাসিক খাতে নিয়ন্ত্রিতভাবে নতুন সংযোগ দেয়া হবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন জেলায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে অনেক অবৈধ সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার আগে অনেক গ্রাহক ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে ডিমান্ড নোটও পেয়েছে। কয়েক বছর ধরে এ ধরনের গ্রাহকদেরকে বৈধ সংযোগ দেয়ার উপায় খোঁজা হচ্ছিল। এমন অবস্থায় গত ২৪ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মত এলএনজি বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করা হয়েছে। আগামী মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এ গ্যাস বাজারজাত করা যাবে।

পেট্রোবাংলা, তিতাস এবং বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি সূত্র জানায়, সারা দেশে প্রায় দেড় লাখ নতুন গ্যাস সংযোগ আবেদনকারী রয়েছেন। তারা ব্যাংকে প্রয়োজনীয় টাকা দিয়েছে এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিমান্ড নোটও ইস্যু হয়েছে। কেউ কেউ বাসাবাড়িতে পাইপলাইনও বসিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু সংযোগ পাননি। তবে আবেদনের পর দীর্ঘদিন ধরে সংযোগের অপেক্ষায় থেকে অনেকে টাকা ফেরত নিয়েছেন।

গৃহস্থালিতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত হলো আবাসিক খাতে এ মুহূর্তে সম্পূর্ণভাবে নতুন সংযোগ নয়। যারা ইতিমধ্যে সংযোগের জন্য আবেদন করে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে ফেলেছেন তাদেরকে দেয়া হবে। এছাড়া যেসব ভবনের কিছু ফ্ল্যাটে সংযোগ আছে এবং কিছু ফ্লাটে নেই সেগুলোর বাকিগুলোতে সংযোগ দেয়া হবে। ঢালাওভাবে নয় নতুন সংযোগ দিতে পারবো না। তিনি বলেন, শিল্পে গ্যাস সংযোগে আর কোনো বাধা নেই। যেখানে শিল্প এলাকা সেখানেই গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে।

পেট্রোবাংলার আওতাধীন ছয়টি সরকারি কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস বিতরণ করে। এর মধ্যে তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিই বিতরণ করে প্রায় ৬০ শতাংশ। কোম্পানিটি ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলায় গ্যাস সরবরাহ করছে। দেশের ৩৮ লাখ আবাসিক গ্যাস গ্রাহকের মধ্যে ২৭ লাখই এ কোম্পানির সেবা নেয়।

তিতাস গ্যাস কোম্পানির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গৃহস্থালিতে নতুন সংযোগ বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা তারা পাননি। যতক্ষণ আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা না পাওয়া যাবে ততক্ষণ নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ।

বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলে বিপণনের দায়িত্বে থাকা বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি দীর্ঘদিনের। এরপরও ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন সংযোগ দেয়ার বাধা নিষেধটি কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। তখন অনেক গ্রাহক সংযোগ পেয়েছিল ও নতুন আবেদন জমা পড়েছিল।

রাজশাহী অঞ্চলে বিপণনের দায়িত্বে থাকা পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ওই অঞ্চলে পাইপলাইন স্থাপন এবং নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে প্রায় ৯ হাজার গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছিল। এরপর আবাসিকে সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় ১১ হাজার গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিমান্ড নোট ইস্যু হলেও সংযোগ পায়নি।

পেট্রোবাংলার শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে হয়তো সরকার আবাসিকে কিছু সংযোগ বাড়াতে চাইছে। তবে এটি স্থায়ী হবে না। কেননা আবাসিকে এলপিজি ব্যবহার করাই সরকারের চূড়ান্ত নীতি ও সিদ্ধান্ত।