লিটন হোসেন লিমন, নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের রাণী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজে ছয়টি বিভাগে কোনই শিক্ষক না থাকায় বাইরে থেকে ভাড়া করা শিক্ষক দিয়ে ক্লাশ চালানো হচ্ছে। কলেজে মোট ৩৩ জন শিক্ষকের মধ্যে এখন কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ জন অথাৎ প্রায় অর্ধেক। ইংরেজি,অর্থনীতি,প্রাণিবিদ্যা,গণিত, পরিসংখ্যান এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বীমা বিভাগে কোনো শিক্ষকই নেই। শিক্ষক ভাড়া করে চলছে এসব বিভাগের পড়ালেখা। কলেজের তিন হাজারেরও বেশী ছাত্রীর পড়ালেখা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ সহ ছাত্রীদের অভিভাবকবৃন্দ। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নারগিস সুর্ইাযা আখতার জানান ,কলেজে ছয়টি সম্মান (অনার্স) বিষয়সহ মোট ১৮টি বিষয়ে পড়ানো হয়। কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকসহ ¯œাতক ও সম্মানের তিন হাজারেরও বেশী শিক্ষার্থী রয়েছে। জনবল কাঠামো অনুসারে কলেজে মোট শিক্ষকের পদ ৩৩টি। বছরের অধিকাংশ সময় এসব পদের শিক্ষকবৃন্দ কর্মরত না থাকায় নতুন শিক্ষকদের এখানে নিয়োগ দেয়া হয়। তাঁরা কলেজে যোগদানের পর থেকেই অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যাওযার জন্য চেষ্টা শুরু করে দেন এবং দুই-একমাস থাকার পর তাঁরা চলেও যান। নতুন শিক্ষকদের জন্য এটা যেন অনেকটা ‘ট্রানজিট কলেজ’। বর্তমানে ইংরেজি বিভাগের দু’টি পদই শূন্য। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগেও কোন শিক্ষক নেই। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে (অনার্স) তিনটি পদের বিপরীতে দুইজন শিক্ষক রয়েছেন। দর্শন বিভাগের দু’টি পদের একটি শূন্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের (অনার্স) তিনটি পদে মাত্র একজন শিক্ষক আছেন। অর্থনীতি বিভাগের দু’টি পদই শূন্য। পদার্থ বিদ্যা বিভাগের দু’টির একটি শূন্য। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দু’টি পদই শূন্য। গণিতের একমাত্র পদে কোনো শিক্ষক নেই। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দু’টি পদের একটি শূন্য। ব্যবস্থাপনা বিভাগে আছেন মাত্র একজন শিক্ষক। মার্কেটিং বিভাগে দু’টি পদের একটি ফাঁকা। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বীমা বিভাগের একমাত্র পদটিও রয়েছে শূন্য। পরিসংখ্যান বিভাগেও শিক্ষক নাই। এছাড়া পদার্থ ও জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রদর্শক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী বিউটি আক্তার জানান, ইংরেজী বিভাগের সাধারণ ক্লাশে এক হাজারের বেশী ছাত্রী অথচ শিক্ষক না থাকায় তারা ক্লাশ করতে পারছে না বলে পাঠ্যক্রমও শেষ করা যাচ্ছেনা। বাইরের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়েই তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আঁখি পারভিন নামের এক ছাত্রী জানায়,অর্থনীতির মত কঠিন বিষয়ে ক্লাশ শিক্ষক না থাকায় তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ভাড়া করা শিক্ষকরা ক্লাশ নেন। তবে তাদের সাথে ছাত্রীরা মন খুলে ক্লাশে অংশ নিতেও পারে না। শিক্ষক শূন্যতার বিষয় নিয়ে তারা অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে বিব্রত হচ্ছে। কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক দিলীপ কুমার রায় এসব পদে শিক্ষক না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে তারা বার বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ছাত্রীদের ক্লাশ না করিয়ে তাদেরতো কলেজে শুধুই বসিয়ে রাখা যায়না তাই বেসরকারি শিক্ষকদের ভাড়া করে এনে ছাত্রীদের পাঠ্যক্রম শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাণী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নারগিস সুরাইয়া আখতার বলেছেন, ‘শিক্ষকের জন্য আমি সব সময়েই চেষ্টা করছি কিন্তু শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে ওপর থেকে স্থায়ী কোন তেমন কোন কার্যকরী ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। এ জন্য আমরা বসেও নেই। সমস্যা কাটানোর জন্য শিক্ষক ভাড়া করে তাদের দিয়েই দিয়ে নিয়মিত ক্লাশ নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি এতে ছাত্রীরা ফলাফলও ভালো করবে।’