অনলাইন ডেস্ক : মাথা যেহেতু আছে, কাজেই তা চুলকাবেই। কিন্তু ক্রমাগত নখ দিয়ে মাথার ত্বক চুলকে যাওয়া দারুণ বিরক্তির কাজ। তা ছাড়া করোটির ত্বকে চুলকানো বেশ স্পর্শকাতর বিষয়। যন্ত্রণাদায়ক তো বটেই। অতি চুলকানিতে ক্ষত তৈরি হতে পারে। বেশি বেশি চুলকানি হওয়া এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যাকে বলা হয় ‘ইচ-ক্র্যাচ লুপ’।
প্রথমে চুলকালে বেশ আরাম লাগে। কিন্তু তা খুব দ্রুত ভোগাতে শুরু করবে। একসময় ব্যথা শুরু হবে। মাঝে মাঝে আরামবোধের কারণ হলো, চুলকালে ব্যথা সৃষ্টি হয়। তখন মস্তিষ্ক সেই ব্যথা সারাতে সেরোটোনিন হরমোন নিঃস্বরণ করে। তখন কিছুটা ভালো লাগে। কিন্তু এটা বেশিক্ষণ থাকে না। সাধারণত দেহের অন্যান্য অংশের ত্বকে চুলকানি কিছুটা আরাম দিলেও মাথার চুলকানি মোটেও ভালো অনুভূতি দেয় না। এতে ত্বকে সংক্রমণ, চুলের ক্ষতি, ব্যথা, লালচে ভাব আসা এবং চুল উঠে যাওয়ার মতো বাজে অবস্থার সৃষ্টি হয়। একবার চুলকানি শুরু হলে তা থামানো অনেক কঠিন।
যে কারণে হতে পারে
সেবোরহিক ডার্মাটাইটিস বা ড্যানড্রাফ চুলকানির সবচেয়ে সাধারণ কারণ। তবে এই খুশকির আসল কারণ সঠিকভাবে জানা নেই। হতে পারে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে খুশকি হয়। কিংবা শুষ্ক ত্বক বা ছত্রাকের কারণে হতে পারে। আবার স্ট্রেস বা মৌসুম পরিবর্তনের কারণেও ঘটতে পারে।
অ্যালার্জি, খুশকির সংস্পর্শ, উকুন, একজিমা, স্কাল্প সোরোসিস, রোসাসিয়া, রিংওয়ার্ম, স্ক্যাবিস, লুপুস, ফোলিকিউলিটিস এবং ছত্রাকের সংক্রমণে এমন হয়। কাজেই মাথা চুলকানোর পেছনে বহু কারণ থাকতে পারে। তাই একে অবহেলা করা ঠিক নয়। যদি চুলকাতে চুলকাতে আপনার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং ব্যথার সৃষ্টি হয়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার সময় হয়েছে।
বাড়িতেই চিকিৎসা
ঘরের জিনিসেই মাথার ত্বকের চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এখানে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পথ্যের কথা জানাচ্ছেন। এগুলোর ব্যবহারে মাথার চুলকানি থেকে মুক্তি মিলবে।
টি ট্রি ওয়েল
এটা এক তেল যা মেলালিউকা আল্টারনিফোলিয়া গাছের নির্যা। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা শত শত বছর ধরে তাদের ত্বকের বিভিন্ন রোগ সারাইয়ে এই তেলের ব্যবহার করে আসছে। আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণায় জানায়, এ গাছের তেলে আছে শক্তিশালী জীবাণুনাশক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামাটরি উপাদান। এটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের সংক্রমণ দূর করে। টি ট্রি ওয়েল নামে পরিচিত। মাথার ত্বকে চুলকানি হলে এই তেল বেশ কাজ দেয়। ২০০২ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, যারা ৫ শতাংশ টি ট্রি ওয়েল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, তাদের মাথায় সহজে খুশকি হয় না। ২০১১ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, এ ছাড়া কন্ট্যাক্ট ডার্মাটিটিসের মতো ইনফ্লামাটরি এই তেলে সমাধান করা যায়। এই তেলে রিংওয়ার্ম, স্কাল্প সোরোসিস এংব ফোলিকিউলিটিস এর মতো ত্বকের রোগে উপকার মেলে।
অ্যালো ভেরা
এর কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এমনিতেই ত্বকের যত্নে অ্যালো ভেরা সুপরিচিত এক জিনিস। ত্বক কেটে গেলে, র্যাশ উঠলে এবং পোড়াতেও এটি খুবই কার্যকর। ত্বকের যেকোনো সমস্যা নিরাময়ে অ্যালো ভেরা আসলে জাদুর মতো কাজ করে। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই এবং বি১২। এর কাটালাস, ব্র্যাডিকিনাস এবং অ্যামাইলাসসহ বেশি কিছু এনজাইম অ্যান্টি-ইনফ্লামাটরি হিসেবে খুবই কার্যকর। এত আরো আছে ক্যালসিয়াম, কপার, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং ক্রোমিয়ামের মতো খনিজ উপাদান। কাজেই এসব উপাদান মাথার ত্বকের যেকোনো ধরনের ক্ষতিকর জীবাণু মেরে ফেলতে সহায়তা করে। এর হরমোন ক্ষত নিরাময় এবং ব্যথানাশে দারুণ কাজ করে। খুশকির মতো সমস্যা থেকে বাঁচতেও অ্যালো ভেরা খুবই কাজের পরিচয় দেয়।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার
প্রতিদিন শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এবং চুলের অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের প্রাকৃতিক এসিডগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খুলির ত্বকের ক্ষারীয় ভাব বেড়ে যায়। ফলে চুলকানির সৃষ্টি হতে পারে্ এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে অ্যাপল সিডার ভিনেগার। কারণ এতে আছে অ্যাসেটিক এসিড। এটা কেবল অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ালই নয়, ত্বক পরিষ্কার করে দিতেও ওস্তাদ। এই ভিনেগারে খুশকি অতি দ্রুত চলে যায়। ত্বকের ময়লা দূর হয়। স্বাস্থ্যকর মাথার ত্বকে পিএইচ মাত্রা থাকা উচিত ৪.৫ থেকে ৫.৫ এর মধ্যে। কিন্তু চুলের বিভিন্ন প্রসাধনের পিএইচ ভ্যালু ৫.৫ এর বেশি থাকে। ফলে ত্বকে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে অ্যাপল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী।
মধু
এর গুণের শেষ নেই। প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক রয়েছে মধুতে। ত্বকের সমস্যা নিরাময়ে মধুর ব্যবহারের প্রচলন ২ হাজার বছর ধরে চলে আসছে। মধুর পিএইচ মাত্রা থাকে ৩.২ থেকে ৪.৫ এর মধ্যে। কাজেই তা বেশ কয়েক ধরনের জীবাণুকে তাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬০ ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং অন্যান্য জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে মধু। এতে আছে এনজাইম এবং খনিজ। ভিটামিন সি, রিবোফ্লাভিন এবং প্যান্টোথেনিক এসিড চুল মেরামতের কাজ করে। ২০০১ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, মাথার ত্বকের চুলকানি, চুল পড়ে যাওয়া এবং চুলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে মধু এক কার্যকর উপাদান।